ধর্মগ্রন্থে অমানবিক দাসত্ব একটি সাধারণ প্রথা

ভূমিকা

একজন মানুষের সবচাইতে মৌলিক এবং জরুরি অধিকারটি হচ্ছে, তার স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার। জন্মলাভের মধ্য দিয়েই প্রতিটি মানবশিশু স্বাধীন এবং মর্যাদাসম্পন্ন। খাঁচায় বন্দী পাখী কিংবা চিড়িয়াখানায় জন্তু জানোয়ারের মত তার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া যায় না। এই মৌলিক অধিকারটিই বিবৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের প্রথম ধারাটিতে []

ধারা ১
সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ।

কিন্তু এই অধিকারটি যখন কেড়ে নেয়া হয়, তখন আসলে মনুষ্যত্বের সবচেয়ে বড় অপমান হয়। সেই কারণেই মানব ইতিহাসে মানুষের দ্বারা সংঘটিত সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং অন্ধকার এক অধ্যায়ের নাম দাসপ্রথা। প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ, এমনকি এই আধুনিক যুগেও অনেক সমাজেই দাসপ্রথা সামাজিক ও আইনানুগভাবে অনুমোদিত ছিল। এ ব্যবস্থায় বাজারে মানুষের আনুষ্ঠানিক বেচা-কেনা চলত এবং কিনে নেয়া মানুষটি ক্রেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে কাজ করতে বাধ্য থাকতো। তার কোন স্বাধীন ইচ্ছা কিংবা স্বাধীনতা, কোনটিই থাকতো না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় সব শাসন ব্যবস্থাতেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। গবাদিপশুর মত বাজার বসতো, সেখানে প্রকাশ্যেই মানুষেরও কেনাবেচা চলত। শেকলে বেঁধে বন্দী মানুষদের সেখানে ওঠানো হতো, মূল্য নির্ধারণ করা হতো, দরাদরি করা হতো, গরু ভেড়ার মত পরীক্ষা করে দেখা হতো, এরপরে এর মালিকানা হস্তান্তর করা হতো।

আজকের দিনে এসব কল্পনা করাটিও অসম্ভব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেই সময়ে আসলেই এসব প্রথার বহুল প্রচলন ছিল। শুধু আইন পুস্তক ও প্রশাসনিক গ্রন্থেই নয়, এ প্রথা ধর্মগুলোতেও স্বীকৃতি ছিল। মানবিক ধর্মের দাবীদার অনেকগুলো ধর্মই একে বিলুপ্ত ঘোষণা না করে অনেক ক্ষেত্রে বরঞ্চ একে বৈধতাই দিয়েছে।

প্রাচীন ও মধ্যযুগের সেইসব অন্ধকার সময় পেরিয়ে মানব সভ্যতা আধুনিক যুগে এসে পৌঁছোবার পর সারা পৃথিবীতে এখন দাসপ্রথা একটি নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে পরিগণিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের চতুর্থ ধারায় পরিষ্কারভাবে সেটি আমরা দেখতে পাই।

ধারা ৪
কা‌উকে অধীনতা বা দাসত্বে আবদ্ধ করা যাবে না। সকল প্রকার ক্রীতদাস প্রথা এবং দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করা হবে।

এই ধারার ফলাফল হিসেবেই, সারা পৃথিবীতে দাসপ্রথা আজকে নিষিদ্ধ এবং কাউকে কোন অবস্থাতেই দাস বানানো, দাস কেনাবেচা, দাসব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আমরা আধুনিক মানুষ কোন অবস্থাতেই দাসপ্রথাকে আর কোনদিনই পৃথিবীতে দেখতে চাই না। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক আইনকে অমান্য করে কোন না কোনভাবে এখনো দাসপ্রথা চালু রাখা হয়েছে, কিন্তু যে কোন মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষই বুঝবে, এই দাসপ্রথা কত বীভৎস একটি বিষয়।

ইতিহাস থেকে মধ্যযুগের ইউরোপে সর্বপ্রথম পঞ্চদশ শতকের শুরুতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধকরণের যথাযথ সূচনা আমরা দেখতে পাই। দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তৎকালীন সময়ে একটি স্বাধীন নগররাষ্ট্র হিসেবে থাকা রাগুসা অথবা দুব্রভনিক নামক নগররাষ্ট্রটিতে, যা কিনা আধুনিক ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত, দাসপ্রথা সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ১৪১৬ সালে। আধুনিক যুগে নরওয়ে এবং ডেনমার্ক সর্বপ্রথম ১৮০২ সালে দাসবাণিজ্য বন্ধ করে। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।

দাসপ্রথা কাকে বলে

‘দাসত্ব’ অর্থ হল যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন মানুষকে একটি অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে তার স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া এবং তাকে পারিশ্রমিক ছাড়াই শ্রম দিতে বাধ্য করার এক বর্বর সংস্কৃতি। একজন মালিক তার দাসকে যে কোন সময়ে বিক্রি করে দিতে পারেন, এবং মালিকই নির্ধারণ করতে পারেন তাকে দিয়ে কী কাজ করানো হবে। এই ক্ষেত্রে দাসের কোন মতামত বা ইচ্ছাকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদেরকে দাসে পরিণত করা হতো। দাসত্ব হতে পারে কোন মানুষ শত্রুর হাতে আটক হলে, জন্মসূত্রে বা ক্রয় করার মাধ্যমে। এমনকি উপহার হিসেবেও দাস আদান প্রদান মধ্যযুগে বহুল প্রচলিত ছিল।

একজন সাধারণ শ্রমিকের কর্মকাঠামোর সাথে একজন দাসের কর্মকাঠামোর সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যিনি শ্রমিক, তার নিজের ইচ্ছায় কাজের স্থান বা নিয়োগকারীকে ত্যাগ করার, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার পূর্ণ অধিকার থাকে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুসারে একজন সাধারণ শ্রমিকের সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং ছুটি পাওয়ার অধিকার থাকে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুসারে, একজন শ্রমিককে কয় ঘণ্টা কাজ করানো যাবে, সপ্তাহে কয়ঘণ্টা তিনি কাজ করতে পারবেন, বছরে কতদিন ছুটি নিতে পারবেন, অসুস্থ হলে কিংবা উৎসবকালীন কতদিন ছুটি পাবেন সেগুলো আইন দ্বারা নির্ধারিত []। কিন্তু একজন শ্রমিকের সাথে একজন দাসের পার্থক্য এখানেই যে একজন দাসের কখনো কাজের স্থান বা মালিককে ত্যাগ করার, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার থাকে না। ইসলাম ধর্মে দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ইসলামের বিধান যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত প্রযোজ্য, তাই কিয়ামত পর্যন্ত যতদিন ইসলাম থাকবে, ততদিন দাসপ্রথার অস্তিত্ব থাকবে।

যুদ্ধবন্দী বা দাসী সহবাস ‘ধর্ষণ’

ধর্ষণের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি যে,

সাধারণত একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত []। দুইটি পক্ষের মধ্যে সংঘাত বা যুদ্ধের সময়ও ধর্ষণ কিংবা যুদ্ধবন্দীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের মত ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধরণের ধর্ষণ গণহত্যার একটি উপাদান হিসেবেও স্বীকৃত।

একজন দাসী কিংবা যুদ্ধে বন্দী নারীর কখনো যৌনকাজে সম্মতি দানের অধিকার থাকে না। কারণ এই সময়ে তাদের না বলার কোন স্বাধীনতা থাকে না। না বলার স্বাধীনতা না থাকাটিই সম্মতির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। এই কারণে পুরো সভ্য বিশ্বে বন্দী হওয়া কিংবা দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ মানুষের সাথে যে কোন যৌন আচরণ ধর্ষণ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। একজন যুদ্ধবন্দিনী, যার বাবা ভাই থেকে শুরু করে সব আত্মীয় স্বজন বিপক্ষের সৈন্যদের হাতে নিহত হলো, সেই নারীর পক্ষে শত্রু সৈন্যদের সাথে স্বেচ্ছায় যৌনকর্ম করা রীতিমত একটি অবাস্তব ব্যাপার।

ব্যাপারটি বুঝতে কষ্ট হলে আমি পাঠককে অনুরোধ করবো, নিজেকে সেই কাফেরের জায়গাতে বসিয়ে চিন্তা করে দেখুন, ভারতের সৈন্যরা আপনাকে হত্যা করে আপনার মা বোনকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে গেলে, আপনার মা বোন স্বেচ্ছায় সেইসব সৈন্যদের বিছানা গরম করবে কিনা। নিজের ওপর আসলে বিষয়টির ভয়াবহতা বোঝাটি সহজ হয়। একজন যুদ্ধে বন্দী হওয়া মানুষ যেই পরিস্থিতিতে থাকে, তখন স্বাধীনভাবে কোন ধরণের ভয়ভীতি বা চাপ প্রয়োগ ছাড়া তার যৌন সঙ্গী বেছে নেয়া সম্ভবই নয়। যুদ্ধে জয়ী সৈন্যরা তখন কর্তৃত্বশীল। তাই তারা যেটি নির্দেশ দিবে সেটিই পালন করতে হবে। আর সম্মতি তখনই সে দিতে পারবে, যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন এবং না বললে কোন ধরণের চাপের মুখে সে পড়বে না।

তখন যদি সে বিষয়টি মেনেও নেয়, তাহলেও ধরে নিতে হবে, তাকে ধর্ষণ করাই হয়েছে। কারণ মেনে নেয়া ছাড়া তার আর কী বা করার ছিল! তাই পুরো সভ্য বিশ্বে কোন পরাধীন বা যুদ্ধবন্দীর সাথে যৌনকর্ম সরাসরি ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য বাঙালি নারী পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে এবং ধর্ষণের শিকার হয়। বন্দী হওয়া মানুষদের কনসেন্ট না সম্মতি মূল্যহীন। তাই তাদের সাথে যেকোন যৌন আচরণই সংজ্ঞানুসারে ধর্ষণ এবং যুদ্ধাপরাধ। এটি গণহত্যার একটি উপাদানও বটে। একটি যুদ্ধে যারা বন্দী হয়, কিংবা বাজারে যাদেরকে বিক্রি করা হয়, সেইসব মানুষদের যেহেতু যৌন সঙ্গী বাছাই করার বা পছন্দ করার কোন সুযোগ থাকে না, যে তাকে কিনুক বা যে তার মালিক হোক তার সাথেই তার যৌন সঙ্গম করতে বাধ্য হতে হয়, এই কাজটি সংজ্ঞানুসারে ধর্ষণ। সেই হিসেবে ইসলামে বর্ণিত দাসী সহবত কিংবা যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে মালিকের সহবাসের অনুমতি সম্পূর্ণভাবে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরে।

গনিমতের মালের ভাগাভাগি

নবী মুহাম্মদ এবং তার জিহাদী সেনাবাহিনী খায়বার আক্রমণের পরে খায়বার জয় করেন এবং নারী ও শিশুদের গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী করেন। এরপরে বন্দী নারীদের দলবেঁধে একসাথে করা হয় ভাগাভাগির জন্য। যেন গরু ছাগলের মত, যার যাকে ইচ্ছা বেছে নিবে। তখন নবীর সাহাবী দিহয়া নবীর কাছে একটি দাসী চাইতেই নবী তাকে বললেন, এদের মধ্য থেকে যাকে পছন্দ নিয়ে যাও। তিনি বেছে বেছে সবচাইতে সুন্দরী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে নিলেন নিজের যৌনদাসী হিসেবে। এমন সময় এক ব্যক্তি নবী মুহাম্মদকে সাফিয়্যার রূপের কথা বলতেই, নবী দিহয়া সহ সাফিয়্যাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর দিহয়া সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলে নবী সাফিয়্যাকে নিজের জন্য রেখে দিলেন, এবং দিহয়াও নবীর মনের খায়েস বুঝতে পেরে সাফিয়্যার বদলে সাতজন দাসীকে চেয়ে বসলেন। নবী সাতজন দাসীর বিনিময়ে সাফিয়্যাকে নিজের ভাগে নিলেন। তারপর ফেরার পথেই তিনি সাফিয়্যার সঙ্গে বাসর উদযাপন করেন।

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) 
১৭/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দাসী আযাদ করে তাকে বিবাহ করা ফযীলত ৩৩৬৬
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধে যান। বর্ণনাকারী বলেন আমরা খায়বারের কাছে অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ তালহা (রাঃ) সাওয়ার হলেন। আমি ছিলাম আবূ তালহা (রাঃ) এর রাদীফ (তাঁর বাহনে তার পশ্চাতে উপবিষ্ট) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের গলি দিয়ে রওনা দিলেন। এ সময় আমার হাটু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরুদেশ স্পর্শ করছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরু থেকে লুঙ্গী সরে যাচ্ছিল। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উকর শুভ্রতা দেখছিলাম। যখন তিনি বসতীতে প্রবেশ করলেন তখন বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। বস্তুত আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ককৃতদের প্রভাত হয় কত মন্দা’ একথা তিনি তিনবার বলেন।বর্ণনাকারী বলেন ঐ সময় লোকজন তাদের কাজে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ। বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন উস্তাদ বলেছেন, পুরা বাহিনী। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বার জয় করলাম, এবং বন্দীদের একত্রিত করা হল। তখন দিহয়া (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কায়েদীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ যাও একজন দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই কে নিয়ে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনি বনু কুরায়যা ও বনু নযীরের সর্দার হুযাইনের কন্যা সাফিয়্যাকে দিহয়াকে দিয়ে দিয়েছেন? ইনি একমাত্র আপনারই উপযুক্ত হতে পারে। তিনি বললেন, তাকে সাফিয়্যাসহ ডাক। তারপর দিহয়া (রাঃ) সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি দিহয়া (রাঃ) কে বললেন, তুমি সাফিয়্যা ব্যতীত কয়েদীদের মধ্য থেকে অন্য কোন দাসী নিয়ে নাও। বর্ণনাকারী বলেন তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন।

বাইবেলে দাসপ্রথা

পুরো পৃথিবীতে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচাইতে প্রভাবশালী ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম। ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে বাইবেল। এর দুটি অংশ রয়েছে- পুরাতন নিয়ম বা পুরানো ইচ্ছাপত্র বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, এবং নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্ট। ইহুদি ধর্মে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ওল্ড টেস্টামেন্ট মুসা তথা মোজেসের উপর ঈশ্বরের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিল, আর খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী নিউ টেস্টামেন্ট হচ্ছে ঈশ্বরপুত্র তথা স্বয়ং ঈশ্বর যীশুর বাণী। ইহুদিরা অবশ্য তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যীশু এবং নিউ টেস্টামেন্টকে অস্বীকার করে থাকেন। বাইবেলেও বহুস্থানেই রয়েছে দাসপ্রথার সমর্থনে ঈশ্বরের বক্তব্য। ঈশ্বর দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন, মানুষকে দাসে পরিণত করার হুকুমও দিয়েছেন।

পুরাতন নিয়ম বা পুরানো ইচ্ছাপত্র বা ওল্ড টেস্টামেন্টের যাত্রাপুস্তকে বলা হয়েছে [

কোনো পুরুষ যদি তার দাস-দাসীকে রড দিয়ে এমনভাবে আঘাত করে যাতে দাস-দাসী সাথে সাথে মারা যায় তাহলে সেই পুরুষের শাস্তি হবে। কিন্তু দাস-দাসী যদি দু-এক দিনের জন্য জীবিত থাকে তাহলে সেই পুরুষের কোনো শাস্তি হবে না, যেহেতু দাস-দাসী তার নিজস্ব সম্পত্তি।

নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্টের তীত এ বলা হয়েছে [] –

দাসদের তুমি এই শিক্ষা দাও; তারা যেন সবসময় নিজেদের মনিবদের আজ্ঞা পালন করে, তাদের সন্তুষ্ট রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, এবং মনিবদের কথার প্রতিবাদ না করে। তারা যেন মনিবদের কিছু চুরি না করে এবং তাদের মনিবদের বিশ্বাসভাজন হয়৷ এইভাবে তাদের সমস্ত, আচরণে প্রকাশ পাবে যে আমাদের ত্রাণকর্তা ঈশ্বরের শিক্ষা উত্তম৷

নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্টের লুক এর গসপেলে বলা হয়েছে [] –

যে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা যে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে৷ কিন্তু যে তার মনিব কি চায় তা জানে না, এই না জানার দরুন এমন কাজ করে ফেলেছে যার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত, সেই দাসের কম শাস্তি হবে৷ যাকে বেশী দেওয়া হয়েছে, তার কাছ থেকে বেশী পাবার আশা করা হবে৷ যার ওপর বেশী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, লোকেরা তার কাছ থেকে অধিক চাইবে৷

Post a Comment

5 Comments

  1. বিজ্ঞান এই মহাবিশ্ব মাত্র ৬% আবিষ্কার করতে পেরেছে জনাব তাই এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা কি আদৌ সমীচীন?

    ReplyDelete
  2. এই কুত্তার বাচ্চা তরে পাইলে তর নাড়িভুড়ি টেনে ফেলবো।

    ReplyDelete
  3. এই বাংলাদেশে পবিত্র মাটিতে তদের মত নাস্তিকদের জায়গা হবে না মনে রাখিস।

    ReplyDelete
  4. বিদেশ বসে ধর্মকে আগার করে কি বুঝাতে চাচ্ছিস এটা আমাকে বল, এটা কি বীরের পরিচয়।

    ReplyDelete
  5. তুই আয় দেশে তরে হত্যা করে আমি একটা ভাল কাজের পরিচয় দিতে পারবো আল্লাহর কাছে কিয়ামতের ময়দানে।

    ReplyDelete