দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নব্য বাস্তববাদীগণ জ্ঞানের সত্যতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গণিত ও পদার্থবিদ্যার নির্ভুল সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু বৈচারিক বাস্তববাদীগণ মনে করেন, জ্ঞাতা ও জ্ঞায়বস্তুর মাঝে আন্তরসত্তার সমন্বয়মূলক চিন্তার কারণে জ্ঞান সত্য বা ভ্রান্ত হয়। এতে জ্ঞানের সীমা সত্যের চেয়ে অধিক বিস্তৃত বলে প্রমাণিত হয়। তাছাড়া ধারণা ও বাস্তব ঘটনার বিভিন্ন অনুরুপতার কারণে সত্য বিভিন্ন রুপে প্রতিভাত হয়ে থাকে। তবে এসব সত্যর মধ্যে মাত্রাগত কোন পার্থক্য থাকে না। আবার আত্নগত ভাববাদীদের মতে, ধারণা শুধু জ্ঞানের আকার দিতে পারে, জ্ঞানের সত্যতা প্রতিপাদন করতে পারে না। অন্যদিকে, বস্তুগত ভাববাদী হিসেবে হেগেল, ব্র্যাডলি, বোসস্কে প্রমুখ দার্শনিকগণ মনে করেন যে বিভিন্ন বচনের সঙ্গতির মাঝে বচনের সত্যতা নিহিত থাকে। তাঁরা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকে শুধু মাত্রাগত পার্থক্য বলে উল্লেখ করেন। আর সত্যতা সম্পর্কে প্রয়োগবাদীদের ধারণা হলো সত্যের তাত্ত্বিক মূল্যের মাঝে বাস্তব মূল্য নিহিত থাকে। তাঁরা বচনের বাস্তব উপযোগিতাকে সত্যতা নির্ণয়ের মানদণ্ড বলে গণ্য করেছেন। তবে তাঁরা বস্তু এবং ধারণার অনুরুপতায়ও বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে, অভিজ্ঞতাবাদীরা সত্যের বাস্তব দিকটিকে সত্য অনুসন্ধানের উপায় বলে মাত্রাতিরিক্ত জোর দেন। ফলে এর বিপরীত মতাদর্শে বলা হয় যে, তত্ত্বই আসলে বচনের সত্যতাকে বাস্তবের পথ প্রদর্শন করে।
অধিবিদ্যক দৃষ্টিকোণ থেকে আবার দাবি করা হয় যে, তত্ত্বগত দিক থেকেই শুধু সত্য উদঘাটনের পরীক্ষার উপর বিশ্বাস রাখা যায়। তাছাড়া চরম সত্তাবদীগণ সত্যের ক্রমিক উন্নতি ও বিকাশের কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁদের মতের মাঝে আমরা সত্য পরীক্ষার একটি উর্ধ্বমুখী স্তরের বিন্যাস দেখতে পাই। এ মতবাদে নিম্নস্তর অপেক্ষা উচ্চস্তরের সত্যতা অধিক মূল্য ব্যক্ত করে এবং নিম্নস্তরগুলো ভ্রন্ত বলে গণ্য হয়। উল্লেখ্য বুদ্ধিবাদী দার্শনিকবৃন্দও বচরেন সত্যতাকে এভাবে পরীক্ষা করতে আগ্রহী। আর হেগেলীয় ভাববাদ অনুসারে, সত্য হলো সত্তাকে জানার পথে এক অনিবার্য বিরোধের সমাধান বই অন্যকিছু নয়। অতএব সত্য হলো বুদ্ধির দ্বারা সত্তার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সঙ্গতি উপলব্ধি করা। কিন্তু বার্ট্র্যান্ড রাসেল এরুপ সঙ্গতির বিরোধিতা করে বলেন যে, সঙ্গতির ক্ষেত্র- বিশেষে সত্তার সাথে সম্পর্কহীন সংগতিও সৃষ্টি করতে পারে। অনুরুপ অবস্থায় আমরা সঙ্গতিকে কাল্পনিক বা শুধু ধারণাগত রুপ হিসেবে অর্জন করে থাকি। একে সত্যের যথার্থ পরীক্ষা বলা যায় না । আসলে মানববুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে এমনটা ঘটাতে পারে।
0 Comments