এনাক্সিমেন্ডার শুধু সীমাহীন থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করেই ক্ষান্ত হননি, মহাকাশের অন্যান্য জ্যোতিস্কসমূহের উৎপত্তি এবং তাদের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আলোচনা করলে দেখা যায় যে, পৃথিবী এবং এ সকল জ্যোতিস্কমণ্ডলী একই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার ফল। বিশ্বতত্ত্ব অংশের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, বিশ্বের কেন্দ্রস্থিত পৃথিবীর পানি বেষ্টনকারী অগ্নিলয়ের প্রভাবে বাষ্পীভূত হয়ে এর চারদিকে বাষ্পীয় আবরণের সৃষ্টি করে। আর তাচের প্রভাবে এই আবরণ সম্প্রসারণের ফলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে বলয়ের বাইরে পৃথক পৃথক অগ্নিচক্রের সৃষ্টি করে এবং চক্রগুলো পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে। এগুলো পুরু আলো নিরোধক বাষ্পীয় আবরণ দ্বারা আবুত থাকায় অভ্যন্তরস্থ অগ্নি আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থাকে। তবে আবরণের কোনো কোনো স্থানে সুড়ঙ্গ বা নলাকৃতির ছিদ্রপথ রয়েছে। এই ছিদ্র পথ দিয়ে প্রদর্শিত অগ্নিই হচ্ছে চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজি।
ছিদ্রপথ আমাদের দৃষ্টির আড়াল হলেই সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ সংঘটিত হয়। অপরদিকে ছিদ্র বন্ধ ও উন্মুক্ত হওয়ার ফলে যথাক্রমে চাঁদের কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের সৃষ্টি হয়। অগ্নি চক্রগুলো এমনভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে যে, এর ছিদ্রপথ সবসময় নিচের দিকে থাকে। এর ফলে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজির উদয়াস্ত ঘটে। পৃথিবীকে ঘিরে যে বাষ্পীয় আবরণ বিরাজ করছে অকস্মাৎ প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণে তা ভেঙে পড়ার শব্দ এবং এর ফলে সৃষ্টি অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে যথাক্রমে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানি বলে মনে হয়।
এনাক্সিমেন্ডারের জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা আমাদের কাচে অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু মহাকাশে জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর আবর্তনের যান্ত্রিক ব্যাখ্যার পূর্বাভাস এই ব্যাখ্যা থেকে পাওয়া যায়।
0 Comments